রায়হান কবির রবিনঃ বগুড়া জেলা ব্যুরো প্রধানঃ
বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ী, সাজাপুর সহ আশেপাশের বেশ কিছু এলাকায় জামায়াত-শিবিরের ভূমিদস্যুতায় অসহায় ও অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীগন।
গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে এবং ভুক্তভোগীগনের বক্তব্যে এসব তথ্য বেড়িয়ে আসে।
অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে বেশ কিছু ভূমিদস্যু রাঘববোয়াল জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নাম।
ভুক্তভোগীরা বলেন, বিগত দেড় যুগ যাবৎ তাদের পৈতৃক সম্পত্তির উপর তারা যেতে পারেন না, নিজ জায়গায় গেলেও শুনতে হয় নানান ধরনের হুমকি ধামকি সহ প্রাননাশের হুমকি।
শাজাহানপুর উপজেলার বেশ কিছু স্থানে এসব ভুুক্তভোগীগনের প্রায় দেড় একর জায়গা অবৈধ দখল নিয়ে আছে জামায়াত-শিবিরের ভুমিদস্যুরা।
ভুক্তভোগীগনের অভিযোগ, ভুমি অফিস ও রেজিস্ট্রি অফিসের সাথে সক্ষতা গড়ে তুলে জাল কাগজপত্র সহ জাল দলিল করে রাতারাতি এসব জায়গা জমি দখল করে নিচ্ছে ভুমিদস্যুরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অবৈধ ভাবে দখল করা জায়গার মধ্যে দুইটি জায়গার মূল অংশীদারগন জবর দখলকারীদের বিপক্ষে বগুড়ার ১ম যুগ্ম জজ আদালতে মামলা করেছেন, যার মোকদ্দমা নং-২৭০/২০২০ বন্টন। যার বাদীগন,বগুড়ার শেরপুর উপজেলার টাউন কলোনির বাসিন্দা মোছাঃ সুন্দরী বেগম, শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ীর বাসিন্দা, রফিকুল ইসলাম, মমেনা ও লুচি বেগম,
যার বিবাদীরা হলেন, মোঃবুলু মিয়া আকন্দ, জোবেদা, নাজেম মন্ডল, বাদশা মন্ডল,আব্দুস সাত্তার, আব্দুল জলিল, গোলাপি বানু, পিয়ারা সহ মোট ৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বিবাদীরা সকলেই শাজাহানপুর উপজেলার বাসিন্দা।
এছাড়াও ভুক্তভোগীগন ২০১৯ সালে বগুড়ার ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন যার মোকদ্দমা নং-২৯/২০১৯ অন্য। এ মামলায় বর্তমান বগুড়া পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ খোরশেদ আলমকে ১নং আসামী করে মোট দশ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সঠিক নিষ্পত্তি বা সমাধানের প্রত্যাশা করেন ভুক্তভোগীগন। তাতে তেমন কোন লাভ হচ্ছে না ভুক্তভোগীগনের।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বেতগাড়ীর প্রজাপতি হাউজিং ও ডাইম হাউজ ভুক্তভোগীদের জায়গা অবৈধ ভাবে জাল কাগজপত্র দেখিয়ে ভবন নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে দখল নিয়ে আছে।
ভুক্তভোগীগনের মধ্যে বর্তমান শাজাহানপুর উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেতগাড়ী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা, মোঃ সাইফুল ইসলাম ও বগুড়ার শেরপুরের টাউন কলোনির বাসিন্দা মোছাঃ সুন্দরী বেগম গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমান বগুড়া পৌরসভার ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খোরশেদ আলম এসব ভুমি জবরদখলের মূল হোতা এর সাথে জরিত থাকা প্রকাশ্যে ও আড়ালে বেশ কিছু স্থানীয় ও উপজেলা বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের নামও ভুক্তভোগীরা বলেন। তারা আরো বলেন, এদের নাটের গুরু শাজাহানপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াসিন আলী ও তার ছেলে রুবেল। একাধিক অভিযোগ ও দুই ডজন খানেক মামলা কাঁধে নিয়ে তারা এখন স্ব-পরিবারে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন, গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
এছাড়াও বর্তমান ত্রাস হিসাবে,
সাজাপুর ফুলতলা ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক প্রিন্সিপাল বেতগাড়ী দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা ও প্রভাবশালী জামায়াত নেতা রমজান আলী ও তার ছোট ছেলে, ইসলামী ব্যাংক শেরপুর হাইওয়ে শাখার কর্মকর্তা রায়হান ও তার ভগ্নিপতি মাঝিড়া সাজাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু বক্কর, বেতগাড়ী প্রজাপতি হাউজিং এর স্বত্বাধিকারীরা বাদশা ও আঃ রাজ্জাক, বেতগাড়ী মন্ডলপাড়ার মহসিন ও আনসার মন্ডল, বেতগাড়ী দক্ষিণ পাড়ার আবু সাইদ, বেতগাড়ী মিজবাউল উলুম হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ সোবহান ক্বারী সহ বেশ কিছু ভূমিদস্যুগন এছাড়াও ডাইম হাউজের স্বত্বাধিকারী মৃত রফিকুল ইসলামও জীবিত অবস্থায় এগুলোর সাথে জরিত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা আরো বলেন এরা প্রত্যেকেই জমায়াত-শিবির ও বিএনপির রাজনীতির সাথে জরিত। তারা বলেন জায়গার দাবি করলেই বা নিজ জায়গায় গেলেও আমাদের শুনতে হয় নানান ধরনের হুমকি ধামকি।
দল ক্ষমতায় না থাকলেও ওদের অত্যাচারে এলাকায় বসবাস করা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানার জন্য গনমাধ্যমকর্মীরা স্থানীয় ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ খোরশেদ আলমের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, এই বলে কথাগুলো উড়িয়ে দেন এবং তার বিরুদ্ধে আনিত মামলার সমন্ধে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন আমি কোন ভুমিদস্যু না আমার বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ মিথ্যে মামলা দায়ের করেছে।
গনমাধ্যমকর্মীরা অভিযুক্ত রমজান আলীর ছোট ছেলে রায়হান এর সাথে সাক্ষাৎ করে কথা বললে, তিনি গনমাধ্যমকে জানান আমি কোন জামায়াত বা শিবিরের সাথে জরিত নয় এবং আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে ভুমিদস্যুর অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে। এছাড়াও অন্যান্য অভিযুক্তকারীদের সাথে কথা বলার জন্য মুঠোফনে যোগাযোগ করলে তারা, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সমন্ধে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
এ বিষয়ে জানার জন্য গনমাধ্যমকর্মীরা শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)’র সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
পরিশেষে ভুক্তভোগীদের পক্ষে মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সুন্দরী বেগম দুইজন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেও আজ জীবনের নিরাপত্তা পাচ্ছি না, আমরা জীবনের নিরাপত্তা চাই, জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডাররা আমাদের সার্বক্ষণিক হুমকি ধামকি প্রদান করেই যাচ্ছে এবং অর্থ দিয়ে কমিশনার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে হাতের কব্জায় রেখেছে। আমরা আমাদের ন্যায্য জমি গুলো ফেরৎ চাই। পরিশেষে ভুক্তভোগীগন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং ভুমিদস্যু জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ক্যাডারদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানান।
Leave a Reply