আব্দুল্লাহ রিপোর্টারঃ ইসলামের চোখে শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সম্পর্ক গোলাম -মনিবের সম্পর্ক নয়।
যা আমরা বুঝতে পারি নবী সঃ জীবন চরিত উপলব্ধি করার মাধ্যমে। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন একজন শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক হবে ভ্রাতৃত্বের ও সাহায্যকারীর। নিজের আত্মীয়স্বজনদের সাথে যেমন সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করা হয়, ঠিক শ্রমিকের সাথেও মালিকের এমন আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করতে ইসলাম কট্টর ভাবে বলছে, পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের আপ্যায়ন করা, শ্রমিকের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি মালিকের খেয়াল রাখা এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা করাকে ইসলাম মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে শামিল করেছে। রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আপন সন্তানসন্ততির মতো শ্রমিকদের মানসম্মানের সাথে তত্ত্বাবধান করো। আর তাদের তা খেতে দেবে, যা তোমরা নিজেরা খেয়ে থাকো’ (মিশকাত, ইবনে মাজাহ)।
শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ককে ভাই ভাই উল্লেখ করে রাসূল (সা:) শ্রমিকদের অধিকার ও পাওনার ব্যাপারে যে উক্তি করেছিলেন তা অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ। মহানবী (সা:) বলেছেন, ‘মজুর-শ্রমিক ও ভৃত্যদের যথারীতি থাকা ও পোশাক দিতে হবে’। মহানবী (সা:) শ্রমিককে আপনজনের সাথে তুলনা করে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের আপনজন ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে যেমন ব্যবহার কর, তাদের সঙ্গে অনুরূপ ব্যবহার করবে’। একই কথা মহানবী (সা:) আরেক হাদীসে উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘তোমরা অধীনস্থদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদেরকে কোন রকমের কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জান না, তাদেরও তোমাদের মতো একটি হৃদয় আছে। ব্যথা দানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্টবোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা প্রদর্শন কর না।’ -বুখারী।
মালিকরা তাদের অধীনস্থ শ্রমিকদের সঙ্গে কিরূপ আচরণ করবে সে সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘এরা (শ্রমিকরা) তোমাদের ভাই, আল্লাহ এদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। অতএব আল্লাহ তা‘আলা যে ব্যক্তির ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন, তার উচিত সে যা খাবে তাকেও তা খাওয়াবে, সে যা পরবে তাকেও তা পরাবে, আর যে কাজ তার পক্ষে সম্ভব নয়, সে কাজের জন্য তাকে কষ্ট দেবে না। আর যদি কষ্ট দেয় তাতে নিজেও তাকে সাহায্য করবে।’ (আহমদ ৫/১৬৮, আবু দাউদ ২/৩৩৭)। রাসূল (সাঃ) আরও বলেছেন, ‘তোমারযে পরিমাণ কাজ অনায়াসে করতে পারবে, সে পরিমাণ কাজই তোমরা (তোমাদের অধীনস্থদের জন্য) আয়োজন কর।’ (নাসাঈ, ইবনে মাযাহ)
ইসলাম মালিককে সহনশীল হতে শিক্ষা দেয় এবং শ্রমিকের দোষত্রুটি ক্ষমা করে দিতে উৎসাহিত করে। শ্রমিকের প্রতি মালিক যাতে সহনশীল থাকে এবং তার ভুলক্রটি ক্ষমার মতো মহৎ মনের অধিকারী হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে রাসুল (সা:)এক হাদীসে বলেছেন, ‘মজুর চাকরদের অপরাধ অসংখ্যবার ক্ষমা করা মহত্ত্বের লক্ষণ। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেছেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (সা:) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা:) চাকর-বাকরের অপরাধ আমি কতবার ক্ষমা করব? রাসুল (সা:) চুপ রইলেন। সে পুনরায় তাঁকে প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ রইলেন। সে পুনরায় তাঁকে প্রশ্ন করলে এবারও তিনি চুপ রইলেন। চতুর্থবার বলার পর বললেন, ‘প্রত্যেক দিন সত্তরবার তাকে ক্ষমা করবে। (আবু দাউদ)।
মালিকের অভদ্র আচরণকে ঘৃণা করে রাসূল (সা:) বলেছেন, “অসদাচরণকারী মালিক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।”
রাসূল (সা:) নিজের জীবনে এ আদর্শগুলো বাস্তবায়ন করে মানব জাতির নিকট দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। রাসূল (সা) এর একান্ত খাদেম হজরত আনাস (রা) বলেন, ‘আমি নবী (সা) এর অধীনে দশ বছর কাজ করেছি, তাঁর খেদমত করেছি। কিন্তু তিনি কোনো দিন আমাকে ভৎসনা করেননি। কোনো দিন বলেননি, এটা এভাবে কেন করেছ, ওটা ওভাবে কেন করোনি? (বুখারি)।অতএব যারা খেটে খাওয়া মানুষ তাদের সাথে মালিক ভাল আচরণ করা, পারিশ্রমিক যথাসময়ে দেওয়া। তাদের দুঃখ কষ্টে পরিমিত সাহায্য করা। যার শিক্ষা নবী সঃ ১৪০০ বছর আগেই আমাদের শিখিয়ে গেছেন এইজন্য আমাদের উচিত তাদের প্রতি সর্ব বিষয়ে খেয়াল রাখা, কেননা মালিকের চালিকা শক্তিই হল শ্রমিক! আল্লাহ বুঝার তাওফিক দিন আমিন।
Leave a Reply