স্টাফ রিপোটারঃ
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের কৃষিপণ্য পরিবহন, হালকা যানবাহন ও সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত বড়দহ সেতুতে আরোপিত টোল বন্ধের দাবিতে ৫ই জানুয়ারী মঙ্গলবার এলাকাবাসীর বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সেতু অবরোধ করে এসব কর্মসূচি পালন করে। বড়দহ সেতু টোল মওকুফ ও মহাসড়ক বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত এই কর্মসূচিতে এলাকার বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশ নেন। এই দাবি বাস্তবায়িত না হলে এলাকাবাসির পক্ষ থেকে লাগাতার সড়ক অবরোধসহ লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচির আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই, হরিরামপুর ও রাখালবুরুজ ইউনিয়নের নদী ভাঙন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা কৃষি পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য হালকা যানবাহনে এই সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করে। এছাড়া গাইবান্ধা জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে হালকা যানবাহন চলাচলে এই সেতু ব্যবহার করে থাকে। এতে সেতু পারাপারে টোল ধার্য করা হলে এ সমস্ত দরিদ্র কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা চরম দুর্ভোগের কবলে পড়বে। সেজন্য এই সেতুতে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো টোল না আদায় করার দাবি জানান তারা। এব্যাপারে গাইবান্ধা-৫ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের সরকার সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে এই সেতুতে কোনো টোল ধার্য না করার জন্য ইতোমধ্যে একটি ডিও লেটারও প্রদান করেছেন।
সেতুর ২ ধারে শত শত নারী পুরুষ মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন করেন। এবং তারা আরো বলেন বড়দহ সেতুর উপর দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার মানুষের পারাপার হয়ে উপজেলা ও জেলা সদরে সংযোগ সেতুটি আত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা রাখছে উন্নয়ন কার্যক্রমে ধারাবাহিগতায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আমাদের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত প্রশাংসিত হয়েছেন। মূলত ১৯৯৭ সালে সেতুটি নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ২০০৭ এ বর্তমান সরকার দায়িত্ব কালিন সময়ে তিন ধাপে মোট ১৮ বছরে নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ১৪৮ মিটর লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে কাজ শুরু হলেও ৩ টি স্প্যান নির্মাণের পর অনিবার্য কারনে নির্মান কাজ ১১ বছর বন্ধ থাকে। নদী ভাঙ্গনের কারনে পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ২০০৭ সালে নির্মাণ কাজের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে ৯১ মিটারে দাড়ায় আবার ২০০৭ সালে সেতুটির কাজ শুরু হয়ে একটি স্প্যান নির্মান হওয়ার পর অজ্ঞাত কারনে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের সহযোগিতা সেতুটির কাজ সম্পন্ন করার নিমিত্তে পুনরায় পুনরায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিলে নির্মাণ কাজটি ২০১৫সালে সম্পন্ন হয়। গত ২০ আগষ্ঠ ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি উদ্বোধন করেন। তৃতীয় দফা নদী ভাঙ্গনের ফলে চুড়ান্ত নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে সেতুটির দৈর্ঘ্য বেড়ে দাড়ায় ২৫৩.৫৬ মিটারে । কিন্তু ২০১৫ সালে প্রণীত সেতুর নিতিমালা অনুযায়ী সেতুটির উপর সড়ক ও জনপদ বিভাগ কর্তৃক টোল আরোপ করা হলে তা গত ১ নভেম্বর ২০১৭ সালে পত্রের আলোকে টোল মওকুফ করে। বড়দহ সেতু টোল মওকুফ ও মহাসড়ক বাস্তবায়ন কমিটি আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব, বলেন এলাকার গরীব দুঃখী, বানভাসী, খেটে খাওয়া মানুষের চলাচলের একমাত্র সেতুতে টোল দিয়ে চলাচল করতে অনেক সমস্যার মুখে পরতে হবে জন সাধারনের। তাই বক্তরা বলেন বড়দহ সেতুর টোল আদায় বন্ধের জোর দাবি জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন বড়দহ সেতু টোল মওকুফ ও মহাসড়ক বাস্তবায়ন কমিটির নেতা ও হরিরাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম রফিক, শাহীন ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পশ্চিম দিকে ৪ কি.মি. দুরে একই নদীর উপর নির্মিত বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ কাটাখালী এবং পূর্বে ২ কি.মি. দূরে ওই নদীর উপরেই সাঘাটা-গোবিন্দগঞ্জ সংযোগকারী ত্রিমোহনী সেতুতে কোন টোল নেয়া হয় না। অথচ একই ধরণের এই সেতুতে এতদাঞ্চলের জনগণের দীর্ঘদিনের দাবিকে উপেক্ষা করেও ৭ জানুয়ারী থেকে উচ্চ হারে টোল ধার্য করা হচ্ছে।
Leave a Reply